মো: রফিকুল ইসলাম ।।
আজকাল ধুলাবালির কারণে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা বড় দায় হয়ে পড়েছে। অফিস আদালত থেকে শুরু করে দশতলার বেডরুম- সর্বত্রই ধুলাবালির অসহ্য যন্ত্রণা। ধুলাবালির সূক্ষ্ম কণাগুলো (এয়ারবোরন পার্টিকেল ম্যাটার >২.৫~১০ মাইক্রন) বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে প্রথমত ফুসফুসে ও রক্তরসে প্রবেশ করে বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্যসমস্যা বা হেলথ্ ডিজঅর্ডার দেখা দেয়।
সচেতন নাগরিক হিসেবে- নিজেকে নিরাপদ রাখতে, বিশেষ করে ধুলাবালিজনিত সর্দি, হাঁচি, কাশি, কফ, নাক-গলার প্রদাহ, ফুসফুসের আলসার, ক্যানসার, অ্যাজমা, অ্যালার্জি, সিওপিডি (ক্রণিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারী ডিজিজ) বা শ্বাসকষ্ট, ব্রংকিউলাইটিস ইত্যাদি স্বাস্থ্যসমস্যা থেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মাস্ক আরো বেশি স্বাস্থ্যরক্ষাকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে। কেননা, শিশু ও বৃদ্ধাবস্থায় শারীরিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় কিংবা কমে যাওয়ায় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার প্রকোপ বেশি দেখা দেয়।
সাধারণত ধুলাবালি, ধোঁয়া, পোলেন গ্রেইন বা পুষ্পরেণু, মোল্ডস, ফাংগাল হাইফি, পেট ড্যানডার, অ্যাসবেটস ইত্যাদি অপদ্রব্য থেকে মাস্ক ব্যবহারকারীকে স্বস্তি দেয়। তাছাড়া শীতকালে কুয়াশা ও শিশিরকণা থেকে ফুসফুস তথা সমস্ত শ্বাসতন্ত্রকে রক্ষার জন্য মাস্ক একটি সাধারণ ও অতি উপকারী উপাদান।
মাস্কের ব্যবহার সর্বজনীন করতে প্রয়োজন মাস্ক সচেতনতা। এজন্য আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। মাস্ক হোক সামাজিক আন্দোলন ও স্বাস্থ্য সচেতনতার অন্যতম হাতিয়ার। আমরা নিজে মাস্ক ব্যবহার করবো এবং অন্যদেরও মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করবো। সমাজে যারা আলোকিত মানুষ, যারা গুরুত্বপূর্ণ কর্মপদে আছেন, তাদেরকে এ আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে। মাস্ক সচেতনতা প্রচারে এবং প্রসারে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। কেননা, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। অফিস আদালত, স্কুল কলেজ, ক্লিনিক হাসপাতালে স্বাস্থ্য সচেতনতায় মাস্কের গুরুত্ব তুলে ধরে মাস্ক সেমিনারের আয়োজন করা যেতে পারে। গার্মেন্টস, কলকারখানা, ফার্ম হাউজ, নির্মাণ কাজে বিশেষ করে ধুলাবালি ও ধোঁয়াযুক্ত সকল কাজে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টিতে এ সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ স্থায়ী আদেশ ও নির্দেশনা দিবেন যাতে সম্মিলিত স্বাস্থ্যরক্ষা সহজ হয়। অতিপরিতাপ ও লজ্জার বিষয় এই যে, আমাদের সমাজে কিছু সচেতন ব্যক্তি আছেন যারা স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অসচেতনতা অবলম্বন করেন। তারা অনেককিছুই জানেন কিন্তু মানেন না। আবার অনেকক্ষেত্রে দেখা গেছে, এই সমস্ত সচেতন ব্যক্তি নিজে তো কখনো মাস্ক পরেন না বরং মাস্ক ব্যবহার করা হাস্যকর মনে করেন। এটা মোটেও ঠিক নয়।
মাস্ক সচেতনতা বাড়াতে আমরা যেসব পদক্ষেপ নিতে পারি তা হলো-
হাট বাজার, বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে ষ্টেশন, ফেরীঘাট ইত্যাদি জনবহুল স্হানে মাস্কের প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। শুধু ধুলাবালি নয় বরং শ্বাসতন্ত্রজনিত ভাইরাল ডিজিজের প্যাথোজেনও এই সমস্ত জনপূর্ণ স্হানে সহজেই একজন হতে অন্যজনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। মাস্ক এক্ষেত্রে প্রতিরোধক হিসেবে আপনাকে আমাকে রক্ষা করতে পারে।
স্কুল কলেজ, ইউনিয়ন পরিষদ, হাসপাতাল, কমিউনিটি হাসপাতাল, লোকাল ও ন্যাশনাল এনজিও এবং চাষীর স্বাস্থ্যরক্ষায় আইপিএম (ইন্টিগ্রেটেড পেষ্ট ম্যানেজমেন্ট) ক্লাবে মাস্ক ব্রিফিং ও মাস্ক সেমিনারের মাধ্যমে মাস্ক সচেতনতা বাড়াতে হবে। তবে আমাদের জন্য আশার বাণী হলো এই যে, সম্প্রতি মাস্ক ফাউন্ডেশন (২০০৮ইং) উপরোল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহে মাস্ক ব্রিফিং ও মাস্ক সেমিনারের আয়োজন করেছে।
প্রচারণা সামগ্রী হিসেবে ষ্টিকার, লিফলেট, পোস্টার, ফোল্ডার, ব্যানার, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। মাস্ক ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে ওয়েবসাইট খুলেছে এবং নিয়মিত পোস্ট চলছে। ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার এই সময়ে মাস্ক সচেতনতা বাড়াতে এই পদক্ষেপ খুবই কাজে আসবে। ‘টেক মাস্ক, সেভ লাং’ স্লোগানসহ ওয়েবসাইট প্রচারণার জন্য www.maskfoundation.com ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট মাস্কফাউন্ডেশন ডট কম ষ্টিকারও ছেপেছে। মাস্ক ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।
Well done, well done, go ahead